বন্ধুত্বের বাঁধনে Accounting Alumni JNU 1994-95 এর বার্ষিক গেট টুগেদার ২০২৪

বন্ধুত্ব মানে শুধু আনন্দ ভাগাভাগি নয়, জীবনের কষ্ট, অভিজ্ঞতা আর স্মৃতিও একসাথে বহন করা। সময়ের স্রোতে কে কোথায় ছড়িয়ে গেছে, কার জীবন কোন পথে এগিয়েছে—সবকিছুর মাঝেও যখন পুরোনো সহপাঠীরা আবার একত্র হয়, তখন সেই মুহূর্ত হয়ে ওঠে এক অনন্য উৎসব। সেই আবেগই ছড়িয়ে পড়ে গত ৮ই নভেম্বর ২০২৪, ঢাকার ধানমন্ডির গ্রান্ড লাউঞ্জ রেস্টুরেন্টে Accounting Alumni জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৪-৯৫ ব্যাচের বার্ষিক গেট টুগেদার ২০২৪-এ। এই প্রোগ্রাম ২০৫জন বন্ধুরা রেজিষ্ট্রেশন করে।

প্রতি বছরের মতো এবারও আয়োজিত এই গেট টুগেদার দিনব্যাপী মিলনমেলায় রূপ নেয়। দুই শতাধিক বন্ধু ও বান্ধবীর উপস্থিতি অনুষ্ঠানস্থলকে ভরিয়ে তোলে হাসি, আড্ডা আর ভালোবাসায়। দীর্ঘদিন পর আবার দেখা হওয়ায় অনেকে একে অপরকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। মনে হচ্ছিল—যেন ক্লাসরুমের সেই দিনগুলো আবার ফিরে এসেছে।

আনুষ্ঠানিক সূচনা ও উষ্ণ অভ্যর্থনা

সকাল ১০টায় সংগঠনের সভাপতি জনাব ইলিয়াস মুন্সি স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। তিনি বন্ধুত্বের গুরুত্ব, সংগঠনের ঐক্য এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জীবনে এই মিলনমেলার ভূমিকা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠান পরিচালনায় দক্ষতা দেখান সাধারণ সম্পাদক জনাব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, যার প্রাণবন্ত উপস্থাপনা দিনব্যাপী আয়োজনে সজীবতা এনে দেয়।

প্রথমবার অংশগ্রহণকারীদের স্মৃতিচারণ

এ বছর বিশেষ একটি অংশ ছিলো নতুনভাবে যুক্ত হওয়া বন্ধুদের স্মৃতিচারণ। যারা আগে কখনো অংশগ্রহণ করতে পারেননি, তারা নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনেকেই শেয়ার করেন—ব্যস্ত জীবনের টানে এতদিন আসা হয়নি, কিন্তু এবার আসতে পেরে তারা যেন জীবনের এক শূন্যতা পূরণ করতে পেরেছেন। তাদের চোখেমুখে ছিলো আবেগ আর আনন্দের মিশেল। পুরোনো বন্ধুদের সাথে পুনর্মিলন তাঁদের হৃদয়ে এক নতুন উচ্ছ্বাস এনে দেয়।

বন্ধুত্বের গল্প, কবিতা ও কৌতুক

গেট টুগেদার শুধু আড্ডা আর স্মৃতিচারণেই সীমাবদ্ধ ছিল না। অনেক বন্ধু নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন, কেউ কেউ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মজার গল্প শোনান। কৌতুকের ফাঁকে ফাঁকে হাসিতে ভরে ওঠে হলরুম। বন্ধুরা আবারও প্রমাণ করেন—বন্ধুত্ব মানে শুধু স্মৃতি নয়, একসাথে ভাগাভাগি করা আনন্দ আর ভালো লাগা।

গান ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

অনুষ্ঠানের বিকেলের পর্ব হয়ে ওঠে সবচেয়ে জমজমাট। আমন্ত্রিত শিল্পীদের পাশাপাশি বন্ধুদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলে। কেউ গেয়ে শোনান প্রিয় কোনো গান, কেউ পরিবেশন করেন নাচ। করতালি, উচ্ছ্বাস আর হাসির শব্দে ভরে ওঠে পুরো পরিবেশ। একসময়কার সহপাঠীরা যেন আবার ফিরে যান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দিনগুলোয়।

বুফে লাঞ্চে আড্ডা আর হাসির ঝলক

দুপুরের বিরতিতে পরিবেশিত সুস্বাদু বুফে লাঞ্চ আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল। আড্ডার টেবিলে চলছিলো একদিকে খাবারের আস্বাদন, অন্যদিকে গল্প আর স্মৃতিচারণ। দীর্ঘদিন পর প্রিয় বন্ধুর সাথে পাশাপাশি বসে খাওয়ার আনন্দ সবার জন্যই ছিল অনন্য।

পঞ্চাশে পা, অথচ মনে আজও তরুণ

বন্ধুত্বের এই আয়োজনে এক অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়ে—যেখানে বয়সের হিসাব থেমে যায়। প্রায় ৫০ বছর বয়সী এই সংগঠনের সদস্যরা গেট টুগেদারের দিনে যেন হয়ে যান তারুণ্যে ভরা যুবক-যুবতী। কারো মুখে ছিলো সেই চিরচেনা হাসি, কারো চোখে ছিলো দুষ্টুমির ঝিলিক। মঞ্চে গান গাওয়া কিংবা কৌতুক বলা—সবকিছুতেই ফুটে উঠছিল তারুণ্যের স্পৃহা। যেন বয়স শুধু সংখ্যার হিসাব, হৃদয়ের ভেতরকার বন্ধুত্ব আর ভালোবাসাই প্রকৃত শক্তি।

বন্ধুত্বের বাঁধন আরও দৃঢ় হলো

দিনভর নানা আয়োজনের ভিড়ে একটাই বিষয় বারবার ফিরে এসেছে—বন্ধুত্ব। অনেকেই বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীর পেরিয়ে জীবনের ব্যস্ততায় ছড়িয়ে গেলেও এই পুনর্মিলন সবাইকে আবার একত্র করেছে। শুধু স্মৃতি নয়, বরং নতুন প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জুগিয়েছে। কেউ কেউ আবেগ নিয়ে বলেছেন—“আজকের এই দিন শুধু আনন্দ নয়, বরং আমাদের পরবর্তী জীবনের জন্য অনুপ্রেরণা।”

উপসংহার

Accounting Alumni JNU 1994-95 এর বার্ষিক গেট টুগেদার ২০২৪ শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং এক প্রাণের মিলনমেলা। প্রতি বছরের এই আয়োজন প্রমাণ করে—সত্যিকারের বন্ধুত্ব বয়স, সময় বা দূরত্বে কখনো ভাঙে না। এ বছর যারা প্রথমবার এলেন, তাদের জন্য দিনটি ছিল অনন্য, আর যারা বারবার আসছেন, তাদের জন্য এটি যেন নতুন করে প্রাণের টান অনুভব করার এক উপলক্ষ।

দিনব্যাপী আড্ডা, গল্প, কবিতা, কৌতুক, গান আর সাংস্কৃতিক পরিবেশনার ভেতর দিয়ে সবার হৃদয়ে তৈরি হয়েছে অমলিন স্মৃতি। এ ধরনের আয়োজন শুধু সম্পর্ককে দৃঢ়ই করে না, বরং সবার মাঝে ভালোবাসা, ভালো লাগা আর বন্ধুত্বের চিরন্তন বন্ধনকে আরও গভীর করে তোলে।

এভাবেই Accounting Alumni JNU 1994-95 এর গেট টুগেদার থেকে জন্ম নেয় আনন্দ, ভালোবাসা আর প্রেরণার নতুন গল্প—যা স্মৃতির অ্যালবামে রয়ে যাবে আজীবন।