Formation
আমরা ১৯৯৪ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। আমাদের ২টি বিভাগে মোট ৭০০ জন শিক্ষার্থী ছিল। আমাদের প্রথম ক্লাস শুরু হয়েছিল ৬ জুন, ১৯৯৫ থেকে এবং দীর্ঘ প্রায় ৭বছর অধ্যয়নের পর আমাদের শিক্ষা শেষ করি ২০০১ সালে এবং বিভিন্ন পেশায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি গৌরবময়, কালজয়ী, ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের অংশ হওয়াতে অনুপ্রেরণার অভাব ছিলনা আমদের। ২০০১ সালে ক্যাম্পাস ছাড়লেও পরিচিতদের কাছ থেকে কমবেশি যোগাযোগ ছিল সব সময়। সেটা ছিল এলাকাভিত্তিক বা পেশাগত কারনে বা আত্নীয়তার বন্ধনের কারণে। কিন্তু সকলের সাথে একসাথে একত্রিত হওয়ার মতো কোন সুযোগ ছিলনা কখনই। এজন্য সময়ের প্রয়োজনে, প্রানের টানে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াতে একটি প্লাটফর্ম তৈরীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় আমাদের মধ্যে।
বন্ধুদের সাথে সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে এবং তারপর থেকে আমাদের অনেক বন্ধু আজকের সংগঠনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। সেই সময়ে যারা বন্ধুদের নিয়ে একটি প্লাটফর্ম তৈরী করার স্বপ্ন দেখেছেলো, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, সাংগঠনিক দক্ষতা, উৎসাহ ও উদ্দীপনায় তৈরী হয়েছে আজকের এই সংগঠন তাদের মধ্যে অন্যতম বন্ধু সাইফুল ইসলাম যিনি এই সংগঠনের প্রথম প্রকাশিত ম্যাগাজিন – সৌহাদ্য তে লিখেছেন তার কিছু স্মৃতি কথা। বন্ধু সাইফুল ইসলামের লেখা থেকে সংক্ষেপে কিছু তথ্য তার নিজের ভাষায় তুলে ধরা হলো-
“ধাক্কা লাগা থেকেই শুরু আমাদের পথচলা-
মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
সাবেক সভাপতি, এক্সিকিউটিভ কমিটি: ২০১৯-২০২০
এ্যাকাউন্টিং এলামনাই জগন্না্থ বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৪-৯৫।
-ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা, ক্লাব, বন্ধুদের সমিতি, মঞ্চনাটকসহ বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনে যুক্ত থাকতাম। তাই ভিন্ন ভিন্ন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ থাকতো। অনেক সময় ভাবতাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের বন্ধুদের সাথে কিভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। মহল্লার ১০-১২ জন বন্ধুর সাথে (পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রিক) কম বেশী যোগায়োগ ছিল। ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিল আরও কম সংখ্যক বন্ধুর সাথে। বন্ধু আসলাম কবির এর সাথে কিছু দিন পর পর দেখা হতো আর তখনই গেট টুগেদারের কথা দুজনে বলতাম। খুব আন্তরিক আড্ডা হতো আর সেই আড্ডায় নজরুল, মাসুম, টিটু, ওয়াসিম, আনিস, মাহফুজ থাকতো। পরক্ষনেই আত্বকেন্দ্রিক ব্যস্ততায় মগ্ন থাকায় গেট টুগেদারের বিষয়টি আর মনে থাকতো না। আবার অনেকদিন পর আসলাম কবিরের সাথে দেখা হলেই বার বার গেট টুগেদারের আলাপ হতো। কিন্তু কখনই হয়ে উঠতো না, সব বন্ধুরা হয়তো এরকমই ভাবতো। এভাবেই কেটে যায় পনেরটি বছর।
২৭শে নভেম্বর ২০১৪, রাত আনুমানিক ৮টা, কোলকাতা সদর স্ট্রীট এলাকায় দুইজন বন্ধু সহ হেটে যাচ্ছিলাম। দুই-তিন জন পাশাপাশি হাটার কারনে অপর দিক থেকে আসা এক লোকের সাথে আমার ধাক্কা লাগে। আমি এবং সেই অপর লোকটি একে অন্যের দিকে তাকালাম। দুজন দুজনকেই চিনতে পারলাম। দুইজনই থমকে দাড়ালাম। আমি বলে উঠলাম তুমি মিরু আর একই সময় সেও বলে উঠলো তুমি সাইফুল। তারপর কেমন আছো, কি করো, কবে আসছো, অন্য বন্ধুরা কেমন আছে? আরো অনেক কথা। কিছু সময়ের জন্য আমার সাথে থাকা অন্য বন্ধুদের কথা ভুলে গেলাম। মিরুও তার সাথে থাকা স্ত্রী, পুত্র ও কন্যার কথাও ভুলে গিয়ে আমার সাথেই কথা বললো। বন্ধুরা রাস্তায় দাড়িয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা মনে মনে বিরক্ত হলেও কিছু বললো না। আমরা কারো বিরক্তের কথা কিছু সময়ের জন্য ভাবিই নাই। আমাদের দুই বন্ধুর্ আবেগ, চেহারার অনুভুতি বুঝতে পেরে সবাই বরং আমাদের কথা বলার মাঝে কোন বিঘ্ন না ঘটিয়ে সুযোগ করেই দিলো। ফোন নাম্বার আদান-প্রদান হলো এবং ঢাকায় ফিরে একটা গেট টুগেদারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেদিনের মতো বিদায় নিলাম। কোলকাতায় আর দেখা হলো না।
২৯শে নভেম্বর, ২০১৪ ঢাকায় ফিরে নজরুল, মাহফুজ, মাসুম, আনিস, টিটু, ওয়াসিম, আসলাম, সোহেল এবং আকবরের সাথে গেট টুগেদারের ব্যাপারে কথা বললাম। মিরুর সাথে কোলকাতায় দেখা হওয়া ও আলাপের বিষয়ে জানালাম। তাদের সবার ব্যাপক উৎসাহে দিনক্ষণ ঠিক করে শিল্পকলা একাডেমিতে বিকেল ৫টায় বসার সিদ্ধান্ত নিলাম।
নিদিষ্ট দিনে অর্থাৎ ১৫মে, ২০১৫ তারিখ বিকেল ৫টার বেশ আগেই শিল্পকলা একাডেমিতে উপস্থিত হলাম। একজন একজন করে বন্ধু আসতে থাকলো। তারপর কোলাকুলি, জড়িয়ে ধরা। কি যে আনন্দ, কি যে শান্তি তা লিখে বোঝানো যাবে না। সবার চোখে মুখে আনন্দের হাসি, আনন্দের অনুভুতি যা শুধুমাত্র অন্তর দিয়েই উপলব্ধি করা যায়।
সেদিন মূলত পুরাতন ঢাকা ও মোহাম্মদপুর ধানমন্ডি কেন্দ্রিক বন্ধুরা উপস্থিত ছিল। যাদের মধ্যে মিরু, রকি, ইকবাল, মিজান (হেপি), বাদশা, মিজান-এফসিএ, লতিফ, আব্দুল্লাহ, আনোয়ার সোহেল অন্যতম। পুরাতন ঢাকার বন্ধুদের নাম আগেই উল্লেখ করেছি। এদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অন্য বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে পরবর্তীতে আবারও গেট-টুগেদারের সিদ্ধান্ত হয়। একটি ফেজবুক আইডি এবং একটি ভাইবার গ্রুফ তৈরী করা হয়। এভাবে কিছুদিন পরপর ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে শিল্প-কলা একাডেমী, টি.এস.সি এবং বিভিন্ন চাইনীজ রেষ্টুরেন্টে কয়েকটি মিটিং সম্পন্ন করে একটা ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। দিনটি ছিলো ২৬শে জুন, ২০১৫ এবং সেই ইফতার পার্টি আয়োজন করা হয়েছিল আমার বাসার ছাদে। প্রতিকুল আবহাওয়া, সারাদিন প্রচন্ড বৃষ্টি বিশেষ করে ইফতারের ২ঘন্টা আগে থেকে জোরালো বৃষ্টি হওয়ায় আমি হতাশ হয়ে যাই। যথাসময়ে প্রত্যাশিত বন্ধুদের শতভাগ উপস্থিতি আমাকে হতাশা কাটিয়ে অনেক বেশী উজ্জিবীত এবং অনুপ্রানিত করে। এরপর থেকে গেট-টুগেদার, ইফতার পার্টি এবং পরিবারের সকলকে নিয়ে পিকনিক এভাবেই চলছে।
এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে দেখে ভালো লাগবে, খুশী হবে এটাই আমরা চেয়েছি। এটা আমাদের মনের খোরাক। আমরা বন্ধুরা একে অপরের সুখে-দুখে পাশে থাকতে চাই। আত্বার আত্নীয় হতে চাই। ধীরে ধীরে বন্ধুদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে নিয়ম-নীতির প্রয়োজন হলো। সকল বন্ধুদের একান্ত পরিশ্রম, সহযোগিতা ও অনুপ্রেরনায় সেই ছোট মিলন মেলা আজ এত বড় সংগঠনে রুপ নিয়েছে। মূলত এটাই ছিলো সংগঠন প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। এই সংগঠন বিভিন্ন সামাজিক এবং উন্নয়নমূলক কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখবে। বৃদ্ধ বয়সেও এভাবে মিলনমেলা অব্যাহত থাকবে। প্রানের টানে তখনও সবাই একত্রিত হবে। এই কামনাই করি সব সময়।”
বন্ধু সাইফুল চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন তার মনের কথা।
এরপর বন্ধুদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকলো। সকলের প্রচেষ্টায় যার যার পরিচিত বন্ধুদের একত্রিত করা অভ্যাহত থাকলো এবং নেতৃত্বদানকারী বন্ধুদের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকলো । বন্ধুর সংখ্যা দিন দিন খুব দ্রুত বাড়তে থাকলে সবাই পিকনিক করতে আগ্রহী হয়। তারপর শুরু হলো পিকনিকের প্রস্তুতি, বেশ কিছু প্রস্তুতি সভা শেষে চূড়ান্ত প্রথম পিকনিকের দিন। দিনটি ছিল ১৫ জানুয়ারী, ২০১৬ আমাদের প্রথম পিকনিক অনুষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘরের মিলনায়তনে ।
প্রথম সফল পিকনিক আয়োজনের পর কমিটি গঠন ও সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। প্রায় ৬ মাস বিরতির পর, ১৬ জুলাই ২০১৬ তারিখে ঢাকার শান্তিনগরে আবার গেট টুগেদার অনুষ্ঠিত হয়। নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে গেট টুগেদারে আলোচনা হয় এবং ২৬ আগস্ট, ২০১৬ তারিখে শিল্পকলা একাডেমিতে আবার একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় উপস্থিত সকলের সম্মতিতে হাবিবুর রহমান হান্নানকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি নতুন গঠনতন্ত্র তৈরী করে। শুরু হয় নতুন দিগন্তের সূচনা। এই আহ্বায়ক কমিটির উদ্যোগে ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭ তারিখে নবাবগঞ্জের কলাকোপার আনসার একাডেমিতে পিকনিক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ৩ জুন, ২০১৭ তারিখে ঢাকার শান্তিনগরে অনুষ্ঠিত ইফতার পার্টিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয় এবং মো: আনোয়ার সোহেলকে সভাপতি ও মারুফ খান বিজয়কে সাধারণ সম্পাদক করে ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর বার্ষিক সাধারন সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং নতুন কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আহ্বায়কসহ মোট ৬টি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রতিটি কমিটিই অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে। বর্তমানে জাহিদ সাগর সভাপতি ও ওমর ফারুক মোল্লা খোকন সাধারণ সম্পাদক সহ ১৫সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দায়িত্ব পালন করছে।
আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট থাকুক।
বাকীটা জীবন সকলের সাথে সুখে-দুঃখে একসাথে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।