ইফতারে ভ্রাতৃত্বের মিলনমেলা: Accounting Alumni JNU 1994-95 এর ইফতার পার্টি ও দোয়া মাহফিল ২০২৫

রমজান মাস মানেই আত্মশুদ্ধি, সংযম, সহমর্মিতা এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের এক অনন্য সময়। এ মাসের প্রতিটি দিন রোজাদারদের জন্য যেমন ধৈর্য ও নিয়মানুবর্তিতার পরীক্ষা, তেমনি ইফতারের মুহূর্ত হয়ে ওঠে আনন্দ, প্রশান্তি ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক। ঠিক সেই আবহেই অনুষ্ঠিত হলো Accounting Alumni জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৪-৯৫ ব্যাচের ইফতার পার্টি ও দোয়া মাহফিল ২০২৫। এই ইফতার পার্টিতে ৮০জন বন্ধু উপস্থিত ছিলো।

আয়োজনের সূচনা
গত ১৪ মার্চ ২০২৫, ঢাকার ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে অবস্থিত হিরাঝিল রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয় এ প্রাণবন্ত মিলনমেলা। সংগঠনের বর্তমান সভাপতি জনাব ইলিয়াস মুন্সি স্বাগত বক্তৃতার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে রমজানের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন—“এই মাস শুধু উপবাস নয়, বরং আত্মসংযম, ভালোবাসা আর ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। আজকের এই ইফতার আমাদের মধ্যে সেই সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।”

অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জনাব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। তাঁর প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় পুরো ইফতার মাহফিল ছিলো সুসংগঠিত ও পরিপাটি।

অংশগ্রহণ ও পরিবেশ

সারাদিনের রোজা শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ১০০+ বন্ধু এই আয়োজনে অংশ নেন। বন্ধুত্বের টানে সবাই যেন নতুন উদ্যমে মিলিত হন। দীর্ঘদিনের ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি ভুলে প্রিয় মুখগুলো একে অপরকে দেখে মুহূর্তেই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। যেনো সবাই ফিরে গিয়েছিলেন তারুণ্যের সেই উচ্ছ্বাসময় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে।

ইফতারের টেবিলে ছিল খেজুর, ফলমূল, শরবত, চানা, পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপি, সমুচা ইত্যাদির সমৃদ্ধ আয়োজন। ইফতার শেষে পরিবেশিত হয় রাতের খাবার, যা আয়োজনকে আরও পূর্ণতা দেয়।

বন্ধুত্বের আবেগ

প্রত্যেকের বয়স আজ প্রায় ৫০ হলেও, এ মিলনমেলায় সবাই যেন আবার হয়ে উঠেছিলেন তরুণ। হাসি-আড্ডা, গল্প আর স্মৃতিচারণে ভরে ওঠে পরিবেশ। যাঁরা প্রথমবার অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে অতীতের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি শেয়ার করা হয়। একে অপরের সঙ্গে কৌতুক, কবিতা, গল্প আর গান শোনানো যেন মিলনমেলাকে আরও রঙিন করে তোলে।

বন্ধুত্বের এই অটুট বন্ধন যেন সবার মনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেঞ্চে বসা সেই স্মৃতিগুলো থেকে শুরু করে জীবনের সুখ-দুঃখের নানা কাহিনি সবার আলোচনায় স্থান পায়।

ইফতারের আধ্যাত্মিকতা

ইফতারের পর অনুষ্ঠিত হয় দোয়া-মোনাজাত। এতে উপস্থিত সকলে দেশের শান্তি, কল্যাণ এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর জন্য প্রার্থনা করেন। বিশেষভাবে প্রয়াত বন্ধুদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এ সময় অনেকের চোখে জল এসে যায়, যা প্রমাণ করে বন্ধুত্বের এই বন্ধন শুধু আড্ডা বা স্মৃতিচারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—বরং একে অপরের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও ভালোবাসায় গাঁথা।

আয়োজনের তাৎপর্য

প্রতি বছরই Accounting Alumni JNU 1994-95 সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়—কখনো বনভোজন, কখনো পারিবারিক সমাবেশ, কখনো বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে রমজানের ইফতার পার্টি অন্য আয়োজনগুলোর চেয়ে আলাদা। কারণ, এতে শুধু আনন্দ আর মিলন নয়, বরং আত্মিক প্রশান্তি ও ধর্মীয় তাৎপর্যের সমন্বয় ঘটে।

এই ধরনের আয়োজন প্রমাণ করে—সময়ের ব্যবধান, পেশাগত ব্যস্ততা কিংবা জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও প্রকৃত বন্ধুত্ব কোনোদিন ম্লান হয় না। বরং একটি সুন্দর উপলক্ষ পেলে তা আবার নতুন করে জেগে ওঠে, প্রাণিত করে, ভালোবাসার বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।

তারুণ্যের উচ্ছ্বাস

মজার বিষয় হলো, সংগঠনের প্রায় সবাই এখন ৫০ বছর বয়সী হলেও, এ ধরনের অনুষ্ঠানে তাঁরা যেন আবার হয়ে ওঠেন তরুণ। হাসি-ঠাট্টা, উচ্ছ্বাস আর প্রাণের টানে যেন কেউ বুঝতেই পারে না, জীবনের অর্ধশতক পেরিয়েছে তাঁরা। বন্ধুত্বের শক্তি, মিলনের আনন্দ আর রমজানের আধ্যাত্মিক আবহ তাঁদের প্রাণে এনে দেয় নতুন সজীবতা।

সমাপনী

Accounting Alumni JNU 1994-95 এর ইফতার পার্টি ২০২৫ ছিলো শুধু একটি ইফতার মাহফিল নয়, বরং ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা আর স্মৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ আয়োজন সবার মনে করিয়ে দিয়েছে—প্রকৃত বন্ধুত্ব সময়কে হার মানায়, বয়সকে ভুলিয়ে দেয়, আর প্রতিটি পুনর্মিলন হয়ে ওঠে জীবনের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।