বন্ধুত্ব, পরিবার ও তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে Accounting Alumni JNU 1994-95 এর বনভোজন ও পারিবারিক মিলনমেলা ২০২৫

বন্ধুত্ব এমন এক বন্ধন, যা বয়স কিংবা সময়কে পরোয়া করে না। জীবনের ব্যস্ততায় একসময়কার সহপাঠীরা ছড়িয়ে পড়লেও, যখন তারা আবার একত্রিত হয়, তখন চারপাশ ভরে ওঠে হাসি, স্মৃতি আর আনন্দে। ঠিক এমনই এক আবেগঘন ও প্রাণবন্ত আয়োজন হয়ে গেল গত ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ঢাকার আমিনবাজারের মধুমতি মডেল টাউনস্থ লেকভিউ রিসোর্ট এন্ড এন্টারটেইনমেন্ট-এ। Accounting Alumni জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৪-৯৫ ব্যাচের উদ্যোগে আয়োজিত বার্ষিক বনভোজন ও পারিবারিক মিলনমেলা ২০২৫-এ মিলিত হয় প্রায় ১৩৬ বন্ধু ও তাদের পরিবার সহ ২৯৪জন।

উদ্বোধন ও আনুষ্ঠানিকতা

সকাল ১০টায় সংগঠনের সভাপতি জনাব ইলিয়াস মুন্সি স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। তিনি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ঐক্য, ভালোবাসা ও পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। দিনব্যাপী এই আয়োজনটি দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক জনাব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থাপনা পুরো মিলনমেলাকে এক নতুন মাত্রা দেয়।

বন্ধুদের সাথে নতুনদের আবেগঘন স্মৃতিচারণ

প্রতি বছরের মতো এবারও অনুষ্ঠানটি ছিলো মিলনমেলার রঙে রাঙানো। তবে বিশেষ এক অনুভূতি যোগ হয় এ বছর প্রথমবার অংশ নেওয়া বন্ধুদের উপস্থিতিতে। দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন শেষে যখন তাঁরা বন্ধুদের মাঝে এসে দাঁড়ান, তখন আবেগ ধরে রাখতে পারেননি কেউই। তাঁরা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানান, এতদিন না আসার আক্ষেপ মুছে গেছে এই মিলনমেলায়।

পরিবারের অংশগ্রহণ ও মিলনমেলার আবহ

এ আয়োজনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিলো পরিবারের সম্পৃক্ততা। বন্ধুদের পাশাপাশি তাঁদের জীবনসঙ্গী, সন্তান এবং পরিবার-পরিজনের উপস্থিতি মিলনমেলাকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত। ছোটদের খেলা, হাসি আর দৌড়ঝাঁপে চারপাশ হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। অনেক পরিবারই জানিয়েছেন, এই মিলনমেলা শুধু বন্ধুদের জন্য নয়, বরং পরিবারের জন্যও এক আনন্দঘন দিন।

স্মৃতিচারণ, আড্ডা ও গল্পের ঝলক

দিনভর আড্ডা, গল্প আর হাসির রেশ ছিলো সবার মুখে। দীর্ঘদিন পরে একে অপরের সাথে দেখা হওয়ার অনুভূতিই ছিলো আলাদা। কেউ বলছিলেন ছাত্রজীবনের দুষ্টুমি, কেউ শোনাচ্ছিলেন জীবনের অভিজ্ঞতা। বন্ধুদের হাসি-ঠাট্টা, খুনসুটি আর প্রাণবন্ত উপস্থিতি মিলনমেলাকে সাজিয়ে তোলে এক স্মৃতিময় আয়োজনে।

খাবার ও আতিথেয়তা

সকালের নাস্তা দিয়ে শুরু হয় অতিথি আপ্যায়ন। দুপুরে পরিবেশিত হয় মজাদার খাবার, আর বিকেলে ছিলো পিঠা ও মৌসুমি ফলের আয়োজন। প্রতিটি পরিবেশনা অতিথিদের মনে বাড়তি আনন্দ যোগ করে। খাবারের টেবিলেই দেখা যায় আড্ডা, গল্প আর বন্ধুত্বের উচ্ছ্বাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল রূপ।

গল্প, কবিতা, কৌতুক ও গান

অনুষ্ঠানে শুধু আড্ডাই নয়, ছিলো সৃজনশীলতার প্রকাশও। অনেক বন্ধু মঞ্চে দাঁড়িয়ে শোনালেন তাঁদের লেখা কবিতা বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মজার গল্প। কেউ পরিবেশন করলেন কৌতুক, আর কেউ গান গেয়ে মাতিয়ে রাখলেন পরিবেশ। একসময়কার ক্লাসরুমের সেই মঞ্চ যেন আবার ফিরে এলো, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে ফুটে উঠছিল আনন্দ আর ভালো লাগার আবহ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আমন্ত্রিত শিল্পীরা

বিকেলের দিকে অনুষ্ঠান আরও জমে ওঠে আমন্ত্রিত শিল্পীদের পরিবেশনায়। নাচ, গান আর ঝলমলে পরিবেশনায় ভরে ওঠে লেকভিউ রিসোর্টের আঙিনা। পরিবারসহ সবাই মেতে ওঠেন আনন্দে। করতালি, উল্লাস আর হাসির শব্দে পুরো পরিবেশ যেন এক উৎসবে পরিণত হয়।

পঞ্চাশে পা, অথচ মনে আজও তরুণ

সংগঠনের সদস্যদের বয়স এখন প্রায় ৫০। কিন্তু বনভোজনের দিনটিতে বয়সের কোনো ছাপ ছিলো না কারো মুখে। সবাই যেন ফিরে গিয়েছিলেন তারুণ্যের দিনগুলোয়। হাসি-আড্ডা, দুষ্টুমি আর গানের তালে সবাই আবার হয়ে উঠেছিলেন যুবক-যুবতী। মনে হচ্ছিল—বয়স কেবল সংখ্যা, প্রকৃত তারুণ্য থাকে হৃদয়ের ভেতরে।

বন্ধুত্বের বাঁধন আরও দৃঢ় হলো

দিন শেষে সবার অভিমত ছিলো একটাই—এ ধরনের আয়োজনে শুধু বন্ধু নয়, পরিবারও একসাথে মিলে যায় এক অটুট বন্ধনে। অনেকেই বলেছেন, “প্রতিবছরের এই আয়োজন আমাদের জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। বন্ধুত্বের এই বন্ধন আমাদের জন্য আজীবন অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”

উপসংহার

Accounting Alumni JNU 1994-95 এর বনভোজন ও পারিবারিক মিলনমেলা ২০২৫ প্রমাণ করেছে, সত্যিকারের বন্ধুত্ব সময়, বয়স কিংবা দূরত্বে ম্লান হয় না। বরং প্রতিবারের মিলনমেলায় সেটি নতুন রূপে ফিরে আসে। আড্ডা, স্মৃতিচারণ, কবিতা, কৌতুক, গান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা আর পরিবারের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি—সব মিলিয়ে এই আয়োজন সবার মনে গেঁথে দিয়েছে এক অমলিন স্মৃতি।

এই মিলনমেলা কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও পরিবারের মিলনমেলা—যেখানে পঞ্চাশোর্ধ মানুষও আবার হয়ে ওঠেন তারুণ্যে ভরা যুবক। এ কারণেই Accounting Alumni JNU 1994-95 এর এই বার্ষিক আয়োজন শুধু প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নয়, তাঁদের পরিবারের কাছেও হয়ে উঠেছে বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত উৎসব